ডিজিটাল সাক্ষরতা থেকে ডিজিটাল নাগরিকে উত্তরণ
১৫ বছর আগে আমি যখন ডিজিটাল সাক্ষরতা নিয়ে কাজ শুরু করি, তখন কাজের পরিধি ছিল কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহারের মধ্যেই। আমাদের লক্ষ্য ছিল, কী কী দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে চাকরির বাজারে ঢোকা যাবে বা ব্যবসায় ভালো করার মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়া যাবে, সেগুলো নিয়ে কাজ করা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা বিশ্বব্যাপী যোগাযোগের বিষয়টি তখন বেশি গুরুত্ব পায়নি। আমাদের একটাই লক্ষ্য ছিল, মানুষের কাছে কত সহজে তথ্য পৌঁছে দেওয়া যায়।
এরপর একদিন তাইওয়ানের একদল স্তন ক্যানসার জয়ী একটি গোষ্ঠীর দেখা পেলাম, যারা নিজেদের মতো করে স্তন ক্যান্সার বিষয়ক পরামর্শ ও সহায়তা দিতে ফেসবুকে একটি গ্রুপ বানিয়েছে। এরপর ফিলিপাইনে আরেক দল মানুষের সঙ্গে দেখা হলো, যারা কম্পিউটার বিষয়ক দক্ষতা বাড়াতে অনলাইনে সমবেত হয়ে পরস্পরকে চাকরির সন্ধান দিত। আমি বুঝতে পারলাম, ইন্টারনেটের জাদু শুধু তথ্য আহরণেই আটকে নেই, সমাজের নানা কাজে অংশ হতে শুরু করেছে।
সংযুক্ত থাকার বিষয়টি মানুষকে এক ধরনের শক্তি দেয়। খুবই গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। বহু অজানাকেও জানা যায়। এসব বিষয়ই আমাকে ‘ডিজিটাল নাগরিক’ বিষয়টি নিয়ে ভাবতে শিখিয়েছে। আমরা সবাই নির্দিষ্ট দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের কাছ থেকে কী প্রত্যাশা করা হয়, তা শিখে বড় হয়েছি। আমরা যে ডিজিটাল বিশ্ব সম্পর্কে জানি, সেখানে আমরা এখন সবাই একত্রে বসবাস করি। এই ডিজিটাল জগৎটি আমাদের অনেক নতুন চ্যালেঞ্জ ও প্রশ্নের মুখোমুখি করে, যেমন- 'এটি কি সত্য?', 'আমি কি বিশ্বাস করতে পারি?', 'যদি আমি কাউকে দেখতে, শুনতে বা অনুভবই করতে না পারি, তাহলে আমার বক্তব্য কি তাকে আহত করতে পারে?', এমনকি, 'যখন আমি কিছু পাঠাই, সেটি আসলে কোথায় যায়?'
১৫ বছর আগে ‘ডিজিটাল সাক্ষরতা’ নিয়ে আমাদের যে ধারণা ছিল, সেটির পরিবর্তন ও বিকাশ দরকার বর্তমান ও ভবিষ্যতের চাহিদা বিবেচনায় রেখে। দায়িত্বশীল ডিজিটাল নাগরিক তৈরির জন্য বিশেষ কিছু দক্ষতার দিকে নজর দেওয়া উচিত, যেমন- বিচার-বিশ্লেষণ, সহানুভূতিশীল আচরণ ও ডিজিটাল প্রকরণের কলাকৌশল। চাক্ষুষ দেখেছি বলে আমি জানি, প্রযুক্তি কতটা ইতিবাচকভাবে বদলে দিতে পারে। আমার ধারণা, ভবিষ্যতের ডিজিটাল নাগরিক গঠনের জন্য আমাদের সামনে বিশেষ মুহূর্ত উপস্থিত। চিন্তাশীল কিছু মানুষকে একত্রিত করে ডিজিটাল নাগরিক হওয়ার সংজ্ঞা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করার এখনই সময়।
দায়িত্বশীল ডিজিটাল নাগরিক তৈরি করার জন্য আমাদের বিশেষ কিছু দক্ষতার দিকে নজর দেওয়া দরকার, যেমন- বিচার বিশ্লেষণ, সহানুভূতিশীল আচরণ ও ডিজিটাল প্রকরণের কলাকৌশল সম্পর্কে জানা।